Tuesday, October 10, 2017

অধর্ম।।

মান সম্বন্ধে হুঁশ। মানুষ।
কত প্রলোভন। কত সংকেত।
মানিয়ে নেওয়ার জন্যে কত উপদেশ।
মানল কই সে, 

একরত্তি মেয়ে? 

শাষিয়ে গেল ‘ দেখে নেব’

একরত্তি মেয়ে। 

মেঘ লুকলো, সুর পালাল, 

আঙুল গরম ঝাঁঝে।।


‘এত প্রতিবাদী কেন,
মেয়ে?
নে, আপোস করে নে
একরত্তি শরীরটা কে
একটুতো ছাড় দে

নে,
আপোস করে নে ‘

মেয়ে চাইল একবার।
মেয়ের আগুন-ঝরা
চোখ,
আঙুল খুঁড়ে মাটি
মেয়ে বুঝিয়ে দিল
রোখ

মেঘলা হোলো দেশ
বৃষ্টি হোলো খুব
আগ জুড়োলো কই
মেঘের সন্দেশ ?

হাওয়ায় ভৈরবী
মাদল বাজে বনে
আঙুল গেড়ে মেয়ে
অন্য কোনোখানে

মেয়ে যুদ্ধ বলেছে
মেয়ে আঙুল গেঁথেছে
মেয়ে শান্ত হবেনা
মেয়ে শপথ নিয়েছে


শাস্তি পেল সে।


আঙুল তুলে মেয়ে

‘জাহান্নমে ফের
আঙুল চিনে নে ‘

পা বাড়াল মেয়ে

ভেংচি কেটে
সূয্যি মামা

‘ লে হালুয়া, লে ‘


মেঘ লুকেলো
ভৈরবী ও
লজ্জ্বা পরকাশে

বুঝিয়ে দিল মেয়ে
আঙুল তুলে মেয়ে
আপোস করা অধর্মীয়

মানুষ হতে চেয়ে।।

Monday, October 9, 2017

কথোপকথন 



কথোপকথন -১


করবী।
নিঃশব্দ চঞ্চলতায় ফিরে ফিরে এসেছে স্মৃতি
কতবার পড়েছি বাড়ি ফিরে উর্বশী অটোমিস
তোমার দেওয়া সবুজ এ' অরণ্যের প্রতিশ্রুতি
তোমাতেই খুঁজে নেব আমি বটবৃক্ষের হদিশ



কৌশিক।
বাড়ি ফিরেছি আধ ঘন্টা হোলো। স্নান করে
এখন বিছানায়। মেহেদী হাসান শুনছি আর
ভাবছি তোমার কথা। কত কিই বলার আছে
তোমায়। নিজস্ব গল্প। বলব কখনো।
নীরবতায়



করবী।
মেঘ-মেদুর হয়ো না প্রিয়।
অবসরে সর্ষের ক্ষেতে হোক বর্ষন।
নাবিক খুঁজে নেবে পথ। শেষ খেয়া
পার হবে। তুমি শুধু হলুদ সর্ষের ক্ষেতে
কোরো উৎসব উদযাপন।



কৌশিক।
তোমাকে একটা কথা আজ বলা হয় নি।
আমি চেয়ে ছিলাম ডগলাসের মতন হাঁটু
মুড়ে তোমায় চাইতে। আঙুল স্পর্শে হতে
চেয়েছিলাম প্রশান্ত এক ভিখারি।
এক উদাস সন্ন্যাসী।।



করবী।
ধূসর আকাশে জ্বলজ্বলে এক ফালি। তুমি
বন্যার এ দুঃখ বুঝেছ কি রবীন্দ্র লেখায়?
যখন ম্লান হোলো সব জ্যোতি, থেকে গেল
করুণা, তখনই, ঠিক তখনই, সব টুকু
ভেসে গেল শেষের খেয়ায়।।



কৌশিক।
সমুদ্র খুব কাছ থেকে দেখিনি, করবী।
দেখেছি তোমার চোখ। জীবনানন্দীয়।
আজ রাতে ঘুম হবে না, জানি। খুব
উতালপাথাল মন। মেহেদী হাসান ই
ভরসা। বাকি অনির্বচনীয়।।



কথোপকথন -২



কৌশিক।
সারা রাত বৃষ্টি হোলো ঝমঝম।
বিদ্যুৎ চমকালো খুব। গজলের
ঠিক যেরকম পরিবেশ বাঞ্ছনীয়
তেমনই। বেশ কাটালাম এক
রাত যা হোক। মেহেদী, পঙ্কজে
উদাসী।



করবী।
ছেলেটা দৌড়চ্ছিল, জানো। যেন
কোন বুসেফেলাস ভর করেছে ওর
শরীর, মন। এক সময় থামলো ও
বালক। বসলো। উঠলো। সবুজ
মাঠ। হঠাৎ আবার দৌড়। কি তীব্র
গতি।



কৌশিক।
আজ ভোরে হাঁটতে বেড়িয়েছিলাম।
বেশী দূর নয়। নিচে সবুজ বাগানে।
কাদা হয়ে আছে মাটি। ছোট ছোট
গর্ত জল ভরা। ভিজে ঘাস, মাটির
নরম স্পর্শ। দু একটা নতুন ফুলের
পাপড়ি।



করবী।
তুমি ভাঙা ব্রিজটা কখনো দেখেছ
কৌশিক ? কেউ জানে না কে কবে
নির্মাণ করেছে এই সেতু। আমরা
শুধু জানি একটা নদী যেমন আছে
একটা ব্রিজও তেমনি।
ছেলেটা থামল হাঁপাতে হাঁপাতে।



কৌশিক।
আজ ছুটি। একটা গোটা দিন অখন্ড
অবসর।
ছোটবেলায় একবার জেমিনী সার্কাস
দেখতে গিয়েছিলাম। একটা জোকার
খুব মজা করেছিল। প্রতিটা খেলার
আগে ও আসত আর গোল স্টেজের
ঠিক মাঝখানে বসে গালে হাত দিয়ে
কি ভাবত যেন। সবাই হাসত। ওর
গম্ভীর মুখোভঙ্গী দেখে। তারপর এক
সময়ে হঠাৎ লাফ মেরে উঠে, একটা
ডিগবাজি মেরে, ও দৌড়ে ভেতরে চলে
যেত । কিছু পরে, অন্ধকার থেকে দৌড়ে
বেরিয়ে আসত একটা ঘোড়া বা অন্য
কোনো মজার কিছু।
আমি খুব হাততালি দিতাম।



করবী।
বিকেলের রেডিওতে খবরটা পেয়েছিল
বাবা। ডায়নার আ্যক্সিডেন্টের। আমি
তখন ছোট। বিশেষ বুঝিনি।
বহু বছর পর বুঝেছি ডায়নাদের এক
জন অরণ্যদেব থাকা ভালো। হায়নার
দল জোট বেঁধে ঘোরে। শিকারের খোঁজে।
ওরা সাহসী নয়। তবু হিংস্র। ধারালো
নখ। চিরে দেয় নরম মাংস।
শুধু কোনো অরণ্য-প্রবাদে ওরা ভয় পায়।

ছেলেটা ঝাঁপাল নদীতে। ব্রিজ ছিল। তবু
ওর সাঁতারেই মন ।


কথোপকথন -৩


করবী।
এ সপ্তাহ অরণ্য উদযাপন।
গভীর বন আমাকে খুব টানে। মনে হয়
কত একান্ত আমার। এ বৃক্ষ-বন্ধন।
কৌশিক, তুমি দেখেছ তেমন বন?
যেখানে শান্ত হয় বৃক্ষ প্রশ্বাসে
উত্তোলিত মন? এসো, খুঁজি।
সঙ্গোপনে হবে আলাপন।



কৌশিক।
সেবার পূজোর মুখেই বৃষ্টি। কোলকাতার
ফুটপাথে লাফিয়েছিল পুঁটি মাছ। ৭৮
সাল। আমি দেখিনি, শুনেছি ছোটকার
কাছে।তোমাদের মফস্বলের পূজোও কি
ভেসেছিল বৃষ্টিতে ? গোবিন্দ স্যার বলতেন
‘ পাড়া-গাঁয়ে বৃষ্টির একটা মেজাজ আছে।
তাল, সুপুরির বাংলায় বৃষ্টি অন্যরকম।
কখনো দেখাবে আমাকে গ্রাম বাংলার
বৃষ্টি, করবী? ‘



করবী।
দিনান্তে দেয়ালে শ্যাওলার ছোপ। ঢেকে
দেয় মেকী বার্তাময় স্লোগান। এমনই
পোড়া কপাল, কে জানে কবে হবে চুনকাম
এ দেয়ালে। সেদিন অদ্ভুত এক স্বপ্ন
দেখলাম জানো। গলির প্রতিটা দেয়ালে
কারা লিখে গেছে কবিতা। মারিয়া রিলকে।
শ্যাওলার নামগন্ধ নেই আর। প্রেমের ছোঁয়ায়
পরিষ্কার,এক সাদা কালো সকাল।



কৌশিক।
রান্নাঘর থেকে খুব ঝাঁঝালো সর্ষের গন্ধ।
মা আজ সর্ষে পাবদা। তুলকালাম বর্ষাটা
আজ হলে বেশ হয়। দুপুরে অখিলবন্ধু
চালিয়ে আলতো ঘুম। বেশ সুন্দর কেটে
যাবে একটা ছুটির দিন।
আমার ছুটির দিন মানেই একটু আরাম।
শরীরের, মনের আর যা কিছু আত্মার।
ঘুম, কবিতা আর অগোছাল চিন্তার।



করবী।
নরিম্যান পয়েন্টে বিচলিত বালিকা। স্রোত,
জনস্রোত। এদিক ওদিক তাকায়। আকাশে
যদি দেখা যায় উড়ন্ত পায়রা। কত বার
ভেবেছে মেয়ে ভবিতব্যকে আলিঙ্গন করে
নেবে। ছেড়ে দেবে রাশ। পারে কই? আসার
আগে আশীর্বাদ করেছিলেন তুকারাম।
মারাঠী ব্রাক্ষ্মণ। ‘ ধর্ম-পথে থেকো। ‘
নিরশ্বরবাদী এ’ শিক্ষকের আশীর্বচন মনে
রেখেছে মেয়ে। তাই দাঁত চেপে জীবন সংগ্রামে।
একদিন ঠিক শহরের চৌরাস্তায় পায়রা
উড়বে।



( আজ আমার খুব প্রিয় এক মানুষের জন্মদিন। বন্ধু- ভাই শিবাজীর। এ লেখাটা আমার শিবাজীকে ওর জন্মদিনে উপহার। )



কথোপকথন-৫


কৌশিক।
আজ বহুবছর পরে পাড়া হঠাৎ অন্ধকারে।
একটা ঘটনা মনে পড়ল। সেটাও বহু বছর
পরে।
ভিড় বাসে শোনা, তাই
কথাগুলো ওলটপালট হতে পারে।
সারমর্ম টা মনে আছে:
‘অন্ধকার ঋণী আলোর কাছে’।
কি প্রসঙ্গে বলেছিলেন মনে নেই, আরো
কিছু আদৌ বলেছিলেন কি ভদ্রলোক?
কি জানি, মনে নেই।
মনে আছে বহুদিন ভেবেছিলাম কথাগুলো
ঘিরে। ১৯৯১। বাবা সদ্য পরলোকে।
শব্দগুলো ফিরে আসত ঘুর্ণিঝড়ে।



করবী।
তুমি কখনো বালুরঘাট গেছ, কৌশিক?
পারলে কখনো যেও।
অদ্ভুত এক বিকেল নেমে আসে বালুরঘাটে।
সূর্য ডুবে যাওয়ার পর, একটা ফ্যকাশে আলো
চাদরের মত জড়িয়ে রাখে শহর। বুট কাঁধে
ছেলের দল মাঠ থেকে ফেরে, রিক্সার টুংটাং
আওয়াজে শহরে একটা বাতাবরণ তৈরী হয়
আর যদিও পাশের বাড়ি, তবু মনে হয় কোন
মহাসিন্ধুর ওপার থেকে ভেসে আসছে কণ্ঠস্বর
আর হারমোনিয়মের যুগলবন্দী।
মনে মায়া জাগে।



কৌশিক।
প্রকৃতির দেখো কি বিচিত্র খেয়াল। কলেজ থেকে
বেরোলাম, তুমুল বৃষ্টি। এখন বারান্দায়, চায়ের
কাপ, শুকনো খটখটে আকাশ।
ইরা নামটা খুব অদ্ভুত, তাই না? আজ কলেজে
প্রথম শুনলাম নামটা। তমালের বান্ধবী।
তুমি কি এই খেলাটা খেলো, করবী? নাম শুনে
একটা ছবি আঁকার খেলা? এটা আমি খেলতাম।
ফার্স্ট ইয়ারে অরূপদা বলেছিল এই খেলাটার মধ্যে
একটা বুর্জোয়া ব্যপার আছে। কে জানে? তারপর
খেলাটা বেশ ছেড়ে দিয়েছিলাম। আজ আবার।
আর কি অদ্ভুত কাকতালীয়।
হ্যাঁ। লম্বা, চশমা, গৌরী, বিনুনি।



করবী।
আজ একটা কাজের কাজ করেছি যা’হোক।
হাত কেটেছি। লেবু কাটতে গিয়ে। টপ টপ
করে রক্তের ফোঁটা, রান্নাঘরের বেসিনে। বেশ
লাগছিল। কির’ম গোলাপী হয়ে যাচ্ছিল জল
আর এত গাঢ় লাল ফোঁটা। বেশ কন্ট্র্যাস্ট।এক
সময় কল খুললাম, ধুয়ে ফেললাম রক্ত।
এখন কি বিচ্ছিরি সাদা এ’ রেখা
কড়ে আঙ্গুলের ডগায়।
লাল গোলাপী এত রকমারি রঙ দেখার পর
বিবর্ণ চামড়ার রং কি ভালো লাগে?
মন রং এ মজে আছে।



কৌশিক।
কতদিন শুনিনি বলো, মন ভালো করা গান
শিবঠাকুরের বিয়ে হোলো, তিন কন্যে দান।



করবী।
ভাবের ঘরে লুকিয়ে আছি, বাইরে কঠিন তালা
সেলুলয়েডে যেমন চেয়ে নিবিড় বঙ্গবালা ।।



কথোপকথন -৬



কৌশিক।
আজ বহুদিন পর ঝলমলে রোদ।
ঘুম ভাঙলো। রোদ্দুর দেখে বেলা
হয়েছে বুঝলাম। রবিবার। তেমন
কাজ নেই আজ।
ক্লাস নাইন-টেনের রবিবার গুলো
এরকম কাটত। ফাঁকা। আলস্যে।
বইয়ের পোকা ছিলাম তাই কালো
ভ্রমর আর ব্যোমকেশ গোগ্রাসে।



করবী।
একবার বাবার সাথে উত্তরবঙ্গ
গিয়েছিলাম আমরা। মা আমি।
কত হবে ? এই ধরো সাত আট
বছর। সন্ধে ট্শেরেনে য়ালদা
থেকে।
কুচবিহারের কাছে একটা জঙ্গল
ছিল। নাম মনে নেই আজ।
গাড়ি চালাতে চালাতে ভদ্রলোক
বললেন ‘ জানো তো দিদি,এর’ম
সাতটা জঙ্গল আছে, পরপর।
তার পর আট নম্বরে সুন্দরবন।
বাঘ আছে।



কৌশিক।
কালীপূজো আসছে। আজকাল
দীপাবলী কথাটা বেশী চলে।
আজ রাস্তায় দেখলাম অনেক
মিষ্টির দোকান আর গয়নার
দোকানে আলোর মালা।
একটা সময় ছিল কালী পূজোর
জানান দিত শ্যমাপোকা। দেয়াল
ৰরে যেত সবুজ রংএ। তারপর
একদিন হঠাৎ কোথায় মিটে যেত
সব, বারুদের গন্ধে। মেঝের ধুলো
হয়ে যেত ছোট ছোট পোকাগুলো।
খুব মায়া হোতো ।



করবী।
বড়দিনে কত দিন পার্কস্ট্রীট যাইনি।
এবার যাবে, কৌশিক? আমরা সে’
ছোটবেলার মতন আইসক্রিম খেতে
খেতে মানুষ দেখব। বাড়ি ফিরব
শেষ মেট্রোয়। তুমি কখনো ট্রিঙ্কাস
গেছ? আমি যাই নি। আমি তো
বাবার সাথে যেতাম, তাই। পার্ক
হোটেলের পরে যে গলিটা, খুব
অন্ধকার, সেই গলিটাতে আমি
একবার ঢুকতে গিয়েছিলাম। কি
আছে দেখতে। খুব বকেছিল বাবা
হাত ছেড়ে ঘোরার জন্যে।
চলো কৌশিক, এবার আবার ঘুরব
পার্কস্ট্রীটে, হাতে হাত ধরে, সারাটা
সন্ধে।
খুব মজা হবে। যাবে?



কথোপকথন - ৭


করবী।
তুমি সেদিন একটা অদ্ভুত কথা বললে
কৌশিক। অনেক ভিড়ে একলা বাঁচার
কথা। কেমন করে অদৃশ্য হয়ে মিলিয়ে
যেতে হয়। এক ঘর লোক, কলকলাকল
তবুও প্রাণে ভয়।
আমার কথা অন্য। যদিও নিঝুম ঘর,
জনমনিষ্যি নেই, তবুও আমি একলা
মানুষ নয়। ঘাড় ঘোরাতেই সহস্র মুখ,
অনেক কথা কয়।



কৌশিক।
তুমি বলেছিলে একটা ছেলের গল্প।
খোয়াই ধরে হাঁটতে হাঁটতে হারিয়ে
গেল। তেপান্তরে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম ‘তুমি চেনো
ছেলেটাকে?’ খুব হাসলে। বললে
‘ সেটা কোনো কথা নয়। ছেলে কি
সবসময় মানুষ হয় ? হতে পারে যে
হারালো, সে লালন সুর। অথবা সে
হতে পারে, এক মুঠো রোদ্দুর। ‘
চারটে স্টেশন পেরিয়ে এলাম, এমন
হেঁয়ালি। জোৎস্না বলে ‘ফেরার পথে
অঙ্ক মেলালি? ‘



করবী।
একটু পরে এসো। এখন সবে
মাঝরাত্তির, স্বপ্নে ভালোবেসো।

কৌশিক।
আজ কবিতা থাক। স্বপ্ন কিছু
মেলুক পাখা, উল্লাসে উন্মাদ ।।

সীমান্তে সেদিন।।



এলোপাথারি হাওয়ায় ওড়ে শুকনো পাতা
খুব দূরে বৃষ্টি হচ্ছে বুঝি বা
মিলিটারি ক্যান্টিনে এঁটো বাসন ধোয় জনৈক
মনের নরম মাংসে
বসে ভাবনার থাবা

জানি না এখানে রঙীন চিঠি আসে কি না আসে
প্রেমে কি পড়ে পাহাড়ি বালিকা?
প্রখর জোৎস্নায় দেখি রূপালী ঝর্ণার ভরতনট্যম
আরো কিছুক্ষণ এ নির্জনে
বসে যায় কি থাকা !

দিগন্তে কালো মেঘ
তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরে রাখাল বালক
যবের মোটা রুটি, পেঁয়াজের ঝাঁঝালো আচার
হাড়ভাঙা খাটুনির পর, দিনান্তে
সুড়সুড়ি দেয় পাখীর নরম পালক

কফিও ঠান্ডা হয়ে আসে।
ঝাপসা হয় শক্তির শেষ শব্দ রেখা
এখন ভিতরে টিমটিম মোমবাতি আলো
বিকেলের পাখী ডানা ঝাপটায়
মন, তোর আজ, কবিতা লেখা কি হোলো?

Saturday, September 30, 2017

বিজয়া-৫

ছোটবেলায় পূজোয় পোশাক পেতাম। উপহার। এখন নিজেই নিজেকে উপহার দিই। এবার দিলাম। কবিতাসমগ্র- বিষ্ঞু দে।

বারান্দায় একান্তে। আজ বিজয়ার রাতে। বেশ কাটল।


মৌসুমী ঘরে। টিনটিন ট্রেনে। এক প্রিয় বন্ধু বিমানে।



আজ বিজয়া। সবার ভালো থাকার প্রার্থনা। মনে মনে। ফোনে ফোনে।



বিষ্ঞুবাবুর কবিতা পাঠ আমার কাছে বেশ একটা ব্যপার।
স্নান করে, শুদ্ধ মনে, শুভ্র বসনে নিরালায় বসে পড়ি।
অদ্ভুত এক মাদকতায়।



পড়ি। লিখি। আবার পড়ি। আবারো লিখি।




বিজয়া - পাঁচ।।



১)

নির্বাক শ্রোতা হয়ে ছিলে, এ মিছিলে
চেরা পতাকায়, কোন খেয়ালী মন্ডলে
হে সজ্জ্বন, তুমি কি জানোনা স্লোগান
'ধ্রূবতারা বিদেশী আকাশে জ্বলজ্বলে'।।



২)

দীক্ষা নিয়েছি তাই, কব্জিতে জড়াই
লাল সুতো। কোন আহাম্মক লড়াই
করেছে বিসর্জনে। আমি বেঁচে আছি
আমার আঙিনায়। নিরংকুশ বড়াই।



৩)

বৃষ্টি দেখেছো? ইসলামপুর থেকে
চকচকে কুশমন্ডীর ও পথে? বেঁকে
গেছে পথ। দু পাশে কাশবন বৃষ্টিতে
উতলা। উতাল হাওয়ার হাঁকডাকে।



৪)

দিনান্তে আজ বিসর্জন। অপরিচিতের
ফোন। কুশল বার্তা বিনিময়। প্রিয়জন
আছে আশেপাশে। ঘরে, বিমানে, ট্রেনে।
বারান্দায় বিজনে। আমি ও বিষ্ঞু দে।



৫)

পল্লীতে পল্লীতে আতসবাজি। কোন
উৎসব আজ এ পাড়াগাঁয়ে। মেজাজী
মজলিশ শেষ কবে দেখেছে নাচঘর ?
মোকদ্দমা হবে এজলাসে। নয়ডায়।


করবী-কৌশিক কথোপকথন।।

করবী-কৌশিক কথোপকথন।।



করবী।

নিঃশব্দ চঞ্চলতায় ফিরে ফিরে এসেছে স্মৃতি
কতবার পড়েছি বাড়ি ফিরে উর্বশী অটোমিস
তোমার দেওয়া সবুজ এ' অরণ্যের প্রতিশ্রুতি
তোমাতেই খুঁজে নেব আমি বটবৃক্ষের হদিশ



কৌশিক।

বাড়ি ফিরেছি আধ ঘন্টা হোলো। স্নান করে
এখন বিছানায়। মেহেদী হাসান শুনছি আর
ভাবছি তোমার কথা। কত কিই বলার আছে
তোমায়। নিজস্ব গল্প। বলব কখনো।
নীরবতায় ।।



করবী।

মেঘ-মেদুর হয়ো না প্রিয়।
অবসরে সর্ষের ক্ষেতে হোক বর্ষন।
নাবিক খুঁজে নেবে পথ। শেষ খেয়া
পার হবে। তুমি শুধু হলুদ সর্ষের ক্ষেতে
কোরো উৎসব উদযাপন।



কৌশিক।

তোমাকে একটা কথা আজ বলা হয় নি।
আমি চেয়ে ছিলাম ডগলাসের মতন হাঁটু
মুড়ে তোমায় চাইতে। আঙুল স্পর্শে হতে
চেয়েছিলাম প্রশান্ত এক ভিখারি।
এক উদাস সন্ন্যাসী।।



করবী।

ধূসর আকাশে জ্বলজ্বলে এক ফালি। তুমি
বন্যার এ দুঃখ বুঝেছ কি রবীন্দ্র লেখায়?
যখন ম্লান হোলো সব জ্যোতি, থেকে গেল
করুণা, তখনই, ঠিক তখনই, সব টুকু
ভেসে গেল শেষের খেয়ায়।।



কৌশিক।

সমুদ্র খুব কাছ থেকে দেখিনি, করবী।
দেখেছি তোমার চোখ। জীবনানন্দীয়।
আজ রাতে ঘুম হবে না, জানি। খুব
উতালপাথাল মন। মেহেদী হাসান ই
ভরসা। বাকি অনির্বচনীয়।।

Thursday, July 13, 2017

পদচিহ্ন।

তখন আমি বাবুরহাটে। প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। একদিন এক দুপুরে এক প্রবীন স্বাস্থ্যকর্মী শুনিয়েছিলেন তার কর্মজীবনের গল্প। গুটিবসন্ত মুছে যাওয়ার গল্প। চিলাপোতার জঙ্গলে হাতি আর বাইসনের পদচিহ্ন ধরে হেঁটে যাওয়ার গল্প। প্রান্তিক গ্রামের খোঁজে। শুনিয়েছিলেন টাইপরাইটারে রিপোর্ট লেখার গল্প। জঙ্গলে তাঁবুতে রাত কাটানোর গল্প।

ঠান্ডা চায়ে গলা ভিজিয়ে বলেছিলেন

'একদিন নতুন কোনো স্বাস্থ্যকর্মী হেঁটে যাবে নতুন কোনো সমস্যার খোঁজে। হেঁটে যাবে হাতি, বাইসনের পাশাপাশি আমারও পায়ের ছাপ ধরে। এটুকু ভেবেই শান্তি। '

পদচিহ্ন।

অনেক দেখেছেন আপনি। গুটী-বসন্তের শেষ
চলমান রেখা ভারতে আফ্রিকায়। অতিক্রম
করেছেন মরুভূমি, ঘন জঙ্গল আর নাগরিক
মিনার। জীবানুর খোঁজে। রাতের নির্জনতায়
আপনার আঙ্গুল মসৃন ওঠা নামা করে টাইপ
মেশিনে। বাইরে পূর্ণিমা। তবু সে সময় কোথায়?
আপনি মগ্ন গবেষনায়। আগামী এক জার্নালে
লেখা হবে জন-স্বাস্থ্যের নতুন অধ্যায়।

একদিন সব থেমে যাবে। কালের নিয়মে নতুন
প্রজন্ম ধরে নেবে হাল। নতুন সমস্যা। নতুন
সমাধান। সেই পরিচিত ভারতে আফ্রিকায়।
উল্লাস বিজ্ঞানের। আপনারই হাঁটা পথে নতুন
প্রজন্ম হেঁটে যায়। লেখা হয় নতুন অধ্যায়।
জন-স্বাস্থ্যের সবুজ পাতায়।

Tuesday, June 20, 2017

অপেক্ষা।।

আবার পাবলো নেরুদা। কবিতা তো নয়। যেন মদিরা-পেয়ালা। রাত হয়। নিশ্চুপ চারধার। এমন সময়। কবিতায় ডুবে যাওয়া। নেরুদায় ভেসে যাওয়া। বেঁচে থাকার। একটা মানে পাওয়া যায়।

ভোরের ঝড়। ভাসমান মেঘ। প্রলয়ের অনিশ্চয়তা। নিঃশব্দ। নিশ্চুপ। এক অদ্ভুত সময়। পাতা ঝড়ে পড়া। ভেসে ভেসে পড়া। এমন সময়। ভালোবাসার। রাত্রির অপেক্ষার।

অপেক্ষা।।

সকাল সকাল বাদলা-ঝড়
বাইরে তখন সূর্য প্রখর ।

বিদায়ী মেঘ হাওয়ায় ভাসে
রুমালের মত ফিরে ফিরে আসে

ভালোবাসা আজ মেঘের হৃদয়
জনান্তিকে শব্দের ভয়

মধু তাল ওই স্বর্গের সুরে
অসি ঝনঝন বাজে কোন দূরে

হাওয়ায় পাতার নেচে নেচে ফেরা
ঝরা পাতা তবু পাখীর অধরা

ঝড়ের দাপটে ঢেউয়ের মাতনে
তুমি ভেসে যাও কোন আঙ্গনে

চুম্বন যত ভেঙ্গে ভেঙ্গে যায়
আমার মদির পানশালাটায়

দরজায় শুনি কোন করাঘাত
দিন বরষায়, আয় আয় রাত

আয় আয় রাত
আয় আয় রাত .......


দুখী-মন।।

One of the most read and acclaimed poems of Pablo Neruda. The Unhappy One. A sheer brilliance of a poetry.

দুখী-মন।।

দোরগোড়ায় দাড়িয়ে ছিল মেয়ে
আমি যেদিন অনেক দূরে পাড়ি
বোঝেনি সে আর হবে না ফেরা
বলে নি সে স্বভাবজাত ' আড়ি '

আমি যেদিন অনেক দূরে পাড়ি

পথ চলছি মাসের পর মাস
দেখতে দেখতে বছর ঘুরে আসে
পথচলতি বন্ধু হোলো কত
সন্ন্যাসিনী ফোকলা দাঁতে হাসে

দেখতে দেখতে বছর ঘুরে আসে

বর্ষা এল মুছিয়ে দিতে স্মৃতি
নতুন ঘাস আরো সবুজ তর
পাহাড় ভাঙ্গে পাথর নুড়ি হয়
দোরগোড়াতে মেয়ে থরোথরো

নতুন ঘাস আরো সবুজ তর

যুদ্ধ এল যুদ্ধ যেমন আসে
রক্ত ঝরে সবুজ মাঠে লাশ
আগুন জ্বলে খামার পুড়ে ছাই
দোরগোড়াতে মেয়ের মৃদু শ্বাস

দোরগোড়াতে মেয়ের মৃদু শ্বাস

উপত্যকা আগুনে ছারখার
আমার প্রিয় দোলনা জঞ্জাল
মন্দিরের ঘন্টা ভেঙে পড়ে
শহর আজ বীভৎস কঙ্কাল

আমার প্রিয় দোলনা জঞ্জাল

পোড়া শহর মৃত্যু শয্যায়
রক্ত জমাট গাভীর চোখ চেয়ে
সবই হল ধ্বংস পারাবার
অপেক্ষায় একলা সেই মেয়ে

দোরগোড়ায় একলা সেই মেয়ে ।।

The Unhappy One.

I left her in the doorway waiting
And I went away, away
She didn't know I would not come back

A dog passed, a nun passed,
a week, and a year passed.
The rains wash d out my footprints
and the grass grew in the street, and one after another, like stones,
Like gradual stones, the years
came down on her head.
Then to war came
like a volcano of blood.
Children and houses died.
And that woman didn't die.

The whole plain caught fire.
The gentle yellow gods
who for a thousand years
had gone on mediating
were cast from the temple in pieces.
They could not go on dreaming.
The sweet homes, the verandah
where I slept in a hammock,
the rosy plants, the leaves
in the shape of huge hands,
the chimneys, the marimbas,
all were crushed and burned.
And where the city has been
only cinders were left,
twisted iron, grotesque
heads of dead statues
and a black stain of blood.
And that was man waiting.

খঞ্জনি

লোরকা। প্রতিবাদী। বিপ্লবী। কলমে। প্রেমিকাকে চিঠি। শত্রুকে বুলেট। লোরকা। কমরেড। আন্দালুসিয়ায়। সবুজ উপত্যকায়।
কখনো পায়ে হেঁটে। কখনো ঘোড়ায়। মানুষের গান। মুক্ত হাওয়ায়। লোরকা গান গায়। গিটারের তারের। মূর্ছনায়। ফ্র্যাঙ্কোর ফ্যাসিস্ত স্বৈরচার উপেক্ষায়।

আজ। ভারতে নতুন যুগ। আকাশ কমলাচ্ছন্ন। নতুন ভোরের উদয়। শহরে গ্রামে অসীম উদ্দীপনায়। তবু বস্তারে গুলি চলে। তবু কালাহান্ডিতে লাশ কাঁধে। মনিপুরে নতুন সূর্যোদয়। মন্দিরে মন্দিরে খঞ্জনি বেজে যায়।।

খঞ্জনি।

পূব আকাশ রাঙালো ভোরের সূর্যে
দূর থেকে ভেসে আসে খঞ্জনি তান
মৃদু স্বরে বাজুক খঞ্জনি মন্ত্র তালে
পল্লীতে হোক জীবনের জয়গান

কে থামাবে খঞ্জনি ঝংকার ?
বাজুক প্রভাতের মন্ত্র তালে
শেষ কবে বেজেছে খঞ্জনি ?
আকাশে সূর্য কমলা ঢালে

বেজে যায়, বেজে যায় খঞ্জনি
হাওয়ার কান্নায়, নদীর কান্নায়
কে থামাবে এ খঞ্জনি বলো
এ' প্রভাতের অশ্রু মোহনায়

বস্তারে পাখী গান গায়
মনিপুরে শান্তি তামাশায়
গুজরাটে মাটি চাপা কান্নায়
কামদুনি বিচার আশায়

খঞ্জনি বেজে যায়
খঞ্জনি বেজে যায়
কে থামাবি, আয়
খঞ্জনি বেজে যায় ......

ভালোবাসা

ফেলে আসা দিন। আমার। তোমার। তোর। গড়পরতা বাঙ্গালীরা। আমাদের বাংলা। সত্তর- আশির।

রবিবার '৭০-৮০ ।।

সে ছিল মধুকাল, অন্তর্যামী,
আমি মানে কোলকাতা,
কোলকাতা আমি।

রবিবার। ঘুম ভাঙত। সেই লোডশেডিং। বাইরে তখন ছিটে- বৃষ্টি। জানলা-কাঁচে ফরিং।

গন্ধ পেতাম। লুচি আর সাদা চচ্চড়ি। বোন ডাকত। 'ওঠ না দাদা।' আমি 'ধুৎতোরি' ।

ব্যাগ নিয়ে। মাংস দোকান। লম্বা হোত লাইন। ভোলা দা। ' মেটে দিস। চর্বি দিস। এইই, ইসমাইল । '

বাড়ি এসে। ব্যাগ রেখে। আরেক কাপ চা। পাশের বাড়ি। মঞ্জরী। ' সা রে গা মা পা।'

বিছানায় আধ-শোয়া। আগাথা ক্রিস্টি। বাইরে তখন ঝম ঝমাঝম। তুমুল বৃষ্টি।

ঘরে তখন। অখিলবন্ধু কিংবা জগন্ময়। চোখের পাতা ভারী হোতো। নিদ্রা তন্ময়।

ঘুম ভাঙত। আলতো ছোঁয়া। 'আসুন, মহাশয়।' মাংস আর গরম ভাত। সুবাস ঘরময়।

উপচে পরা ভাত। মাংস জামবাটি। থালার পাশে পোস্ত বাটা। সর্ষে তেল খাঁটি।

ভাত খেয়ে। আবার ঘুম। এমন ছিল দিন। সঙ্গী হোতো। নির্মলেন্দু। আব্বাসউদ্দিন।

বিকেল মানে। পাড়ার মোড়। আড্ডা জবরদস্ত। ভোলা দার এক কথা। ' খুশ রহো। মস্ত্' ।

কেউ বলত ' চা, দে রে। ' কেউ বলত 'রাজা , বল না বাপ, আলুর চপ। গরম তেলে ভাজা' ।

রাজা-উজির খতম করে। কাটত সন্ধে বেশ। বাড়ি ফিরতাম। একে একে। আড্ডা শেষের রেশ।

মা বাবা আমি বোন। রাতে চাইনিজ। বোন বলত ' ও দাদাভাই, চিংড়ি-লেজ। প্লিইজ' ।

রাত হোতো। পেরিয়ে যেত। আরেক রবিবার। রাত মানে। কেবল তুমি। বেগম আখতার ।

সে ছিল মধুরাত, অন্তর্যামী,
আমি মানে ভালোবাসা,
ভালোবাসা আমি।।