Wednesday, May 24, 2017

চেয়ার

একদিন এমন আসুক যেদিন মানুষ ভুলে যাবে বসার রকম সকম
(যেমন আমরা একদিন ভুলে গেছি চার পায়ে হেঁটে চলার কসরত)
আমরা সেদিন সারাদিন হাঁটব মাঠ থেকে মাঠ জঙ্গল থেকে জঙ্গল
আমরা ঘুরে বেরাব অবিরাম সারা দিন হাতে হাত ধরে পূব পশ্চিমে
তার পর দিন শেষে আমরা খুব ক্লান্ত হলে খুঁজে নেব কোনো গাছ
হেলান দেব বাকলের রুক্ষ শরীরে গভীর নিদ্রায় নরম জোৎস্নায়

বহুযুগ বাদে কখনো তেমন গভীর সমস্যা এলে আমাদের প্রজন্ম
খুঁজে নেবে শুশুনিয়া পাহাড়ের বিশাল পাথর। সেই পাথর ঘিরে হবে আলোচনা
সবাই টানটান দাড়িয়ে মুছে দেবে পৃথিবীর যাবতীয় যন্ত্রনা। পাহাড় শুশুনিয়া।।

Tuesday, May 23, 2017

চিঠি।

One Reader Writes by Ernest Hemingway ভাবালম্বনে।


চিঠি।

ডিব্রুগড়। ১৯৪৫। ডিসেম্বর মাস।

ভোর চারটে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। বাড়িটা রাস্তার শেষ প্রান্তর। লাল টালির ছাদ। ওটা গোগোই বাড়ি।

পূর্ণিমা আজ দ্বিধান্বিত। চিঠিটা লেখা নিয়ে।

সারা রাত ভেবেছে পূর্ণিমা। কাগজের ছবিটাতে তো বেশ লাগল। মনে হয় ধীরমতি। বিশ্বাসযাগ্য। পুরু চশমা। জ্ঞানের স্পষ্ট চিহ্ন।
ভরসা করা যায়। ডা: ভূপেন ফুকন।

ভোর চারটে। পূর্ণিমা লেখা শুরু করে। সাদা কাগজ। নীল কালি।

'' মাননীয় ডাক্তারবাবু,

আমাকে আপনি চিনবেন না। নিতান্ত গৃহবধূ। নামটা লিখলাম না। একান্ত বিপদে পড়ে আপনাকে লিখছি, ডাক্তারবাবু।

দেখা করতে পারতাম। করলাম না। জানি না সামনা সামনি ঠিক কতটা বুঝিয়ে বলতে পারতাম আপনাকে। তাই এই চিঠি।

আমার স্বামী। মিলিটারিতে সেপাই। বছর চারেক বিয়ে হয়েছে আমাদের। সম্পর্ক ভালো।

বছর দেড়েক আগে। বর্মায় যুদ্ধে যায়। ফিরে এসেছে। এক মাস। প্রথমে আমার কাছেই আসে। বাপের বাড়িতে। আমার বাপের বাড়িতে। ডিব্রুগড়ে। তারপর ফিরে যায়। জোরহাট। আমার শ্বশুরবাড়ি।

গত পরশু গিয়েছিলাম। ওর কাছে। গিয়ে দেখি। খুব চঞ্চল হয়ে আছে। আর রাত্রে। একটা ইন্জেকশন নিল, জানেন। জিজ্ঞেস করতে বলল ওর নাকি সিফিলিস হয়েছে। ডাক্তার বলেছে ওষুধ নিলে সেরে যাবে।

খুব ভয় পেয়েছি ডাক্তারবাবু। এ অসুখ সারে? বিয়ের আগে এক মামা বলেছিল সিফিলিস নাকি মারনরোগ। আরও কত কি বলেছিল। বাবাকে। আমি খাবার দিচ্ছিলাম। তাই শুনেছিলাম।

ডাক্তারবাবু, ও কি কোনোদিন ঠিক হবে? আমি জানি না কেন ওর এই অসুখ হোলো। কিভাবে হোলো। আমি শুধু জানি ও আমার স্বামী। বাকি টুকু অজানা থাক। ক্ষতি নেই।

ঈশ্বর ওর মঙ্গল করুক। ঈশ্বর ওকে সুস্থ করে তুলুক। ডাক্তারবাবু, আমাকে সত্যি করে বলুন ও ঠিক হবে তো? আমি কামাক্ষায় পূজো দিতে যাব কাল। যাতে ও তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়।

ও বলা হয়নি । আমাদের একটা ছেলে আছে। এক বছর বয়স। ওর কিছু হবে নাতো? আমি খুব চিন্তায় আছি এ' দুদিন।

উত্তর দেবেন। প্রার্থনা করি।

আমার প্রণাম নেবেন

ইতি

পূর্ণিমা গোগোই
৪/৩, এন বোরদোলই পথ
ডিব্রুগড়। ''

চিঠিটা আরেকবার পড়ে পূর্ণিমা। হেসে ফেলে। খামে ভরে।

১৪ই আগস্ট।

Just finished reading Old Man at the Bridge. Ernest Hemingway.

তারই অনুপ্রেরনায়।।

------------------------------------------

১৪ই আগস্ট।

সময়টা দুপুর। শ্রীনগর থেকে ৪০ মাইল দূরে। একটা ছোট্ট নদী। সীমান্তে অবিরাম গোলাগুলি। সরকারী নির্দেশে মানুষ গ্রামছাড়া।
নদীর উপর সরু সাঁকো। চটজলদি বানানো। মানুষ পার হয়। 'শয়ে 'শয়ে। বাতাসে ক্লান্তির ছাপ। বারুদের গন্ধ। সীমান্তে যুদ্ধের পরোয়ানা।

অনেকক্ষন ধরে দেখছি। বসে আছেন। সাঁকোতে ওঠার ঠিক আগে। রুক্ষ জমিতে। বৃদ্ধ মুসলমান। পাশে রাখা লাঠি। ছেঁড়া কাঁথার পুটলি। আর একটা রং ওঠা চশমার খাপ। ঠায় বসে আছেন। আকাশের দিকে চেয়ে। জনস্রোত হেঁটে যায়। মিলিটারি ট্রাক। মানুষের মিছিল। দ্রুতগতি। উনি বসে থাকেন।

জিজ্ঞেস করলাম। ' কোথা থেকে? ' 'রাজাউরি' ।

বললাম ' এগিয়ে যান মিঞা। এখনো সময় আছে। এর পর যুদ্ধ হবে। গোলা বারুদ। সময় থাকতে এগিয়ে যান। '

'জানেন সাহেব। আমার কেউ নেই। কেউ ছিল না। শুধু চারটে পশু। একটা বেড়াল। ঘরে। একটা পায়রা। খাঁচায়। আর একটা ভেড়া। খোলায়।

সেদিন ভোরবেলা। সুবেদার সাহেব আমাদের গ্রাম ছাড়তে বললেন। তাড়াতাড়ি। তাড়াতাড়ি। বেরিয়ে পরলাম। পথ চলতে চলতে। আজ এই এখানে। গ্রাম থেকে কত দূরে।'

'বুঝলাম। কিন্তু এ সময়। ভালো নয়। এলাকা খালি করতে হবে। সাঁকো ধরে হেঁটে যান। প্রাণ বাঁচান।'

ঘোলা চোখে আমার দিকে তাকালেন বৃদ্ধ। অনেকক্ষন। কি যেন খুঁজলেন। আমার ভিতরে। যেন গভীর মনোযোগে।

তারপর খুব অস্ফূট স্বরে বললেন
'বেড়াল টা ঠিক আস্তানা খুঁজে নেবে। এখানে সেখানে। ভাঙা বাড়িতে।
খাঁচা খুলে দিয়েছিলাম। পায়রাও উড়ে যাবে। আকাশে। হয়তোবা দুশমন দেশে। (একটু থেমে)
শুধু ভেড়াটার কি হবে? ওর জন্য ভারী চিন্তা হয়। '

আমিও যেন একান্তে নিজেকেই বললাম। 'জানি না। আজ ১৪ই আগস্ট। আর আকাশে কালো ঘন মেঘ। যুদ্ধ বিমান ওড়ার মত অনুকূল পরিবেশ নয়। এই দুই যা ভরসা। '

ধীর পায়ে এগিয়ে চললেন বৃদ্ধ।

দুজনেই যেন একসাথে আকাশের দিকে তাকালাম।

ঈশ্বর-আল্লা দয়ালু মেহেরবান।
ভিক্ষা চাই।নিরীহ ভেড়ার প্রাণ।

Saturday, May 13, 2017

বৃষ্টিতে বেড়াল।

বৃষ্টিতে বেড়াল।

( Inspired by Cat In The Rain by Ernest Hemingway )

আকাশ ভেঙে বৃষ্টি। শান্তিনিকেতন। তুমি জানালায়। গুনগুন। 'আমি তখন ছিলেন মগন' ।

নীচে গাড়িবারান্দা। পেরিয়ে শ্যাওলা দেয়াল। দূর থেকে দেখতে পেলে। ছোট্ট এক বেড়াল। আস্তানার খোঁজে।

বললে ' নিয়ে আসি। বড্ড ছোট। ভয়ে জরোসরো।' আমি বললাম ' আমি দেখছি। তুমি জানলা থেকে সরো।'

তুমি বললে ' না। আমি যাব। অনেক দিন বাদে না হয় বৃষ্টি ছোঁয়া পাব। তুমি ই ঘরে থাক।'

সিঁড়ি দিয়ে নামলে। সেই বৃদ্ধ কেয়ারটেকার। ' কোথায় যান। ম্যাডাম । বৃষ্টি । পিছল রাস্তা। ভিজে যাবেন। একটু থেমে যান' ।

কেয়ারটেকার ভালো মানুষ। একান্ত সজ্জ্বন। বিনয়ী, বুদ্ধিমান এবং বিচক্ষন।

শুনলে না। বেড়িয়ে গেলে। ছাদের কার্নিশ। বৃষ্টি একটু ধরে এসেছে। হঠাৎ । ' দিদি, নিন।'

সাঁওতাল কালো মেয়ে। খুলে ধরে ছাতা। বুঝতে পারো। কেয়ারটেকার। বিচক্ষনতা।

দৌড়ে গেলে। কাদা ভেঙে। কোথায় বেড়াল ছানা ? এদিক দেখো । ওদিক দেখো । কোথাও পেলে না।

সাঁওতাল মেয়ে । ' ফিরে চলুন। বড্ড অন্ধকার। সাপ আছে। বেড়াল ঠিক পৌঁছে যাবে নিজের ঠিকানায়।'

ঘরে এলে। কালো মুখ। চোখের পাতা ভারী। ড্রেসিং টেবিল। চিরুনি নিলে। বসলে আড়াআড়ি।

'ভাবছি এবার চুল রাখব। লম্বা বিনুনি। খোঁপা করব। ফিতে বাঁধব। হলদে। বেগুনী। কেমন হবে?'

আমি বললাম। খাটের থেকে। ' কেন ?এই তো বেশ। ছোট চুল। ঝামেলা কম। কদম্ব-ছাঁট কেশ !' হাসলাম।

' নাঃ। কেমন পুরুষ পুরুষ লাগে। লম্বা চুল। কাঁধে ঢল। ওটাই ভালো লাগে। চুলই নারীর শোভা।

তার সাথে। বেড়াল পুষব। আমার পোষা মেনি। বহুদিনের শখ এটা। তোমায় বলি নি। আজ বললাম। '

আমি বললাম। ' কি মুস্কিল। বেড়াল আবার কেন? এমনিতেই জায়গা কম। তার ওপরে যত। '

দরজায় আলতো টোকা। ' দিদি, খুলবেন? ' বিছানা ছেড়ে। দরজা খুলি। সাঁওতাল মেয়ে।

কোলে মুস্কো এক বেড়াল।

হাত বাড়িয়ে বলল মেয়ে । ' দিদি, কেয়ারটেকার মামা '

ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এল। বাজল দামামা।
ড্রেসিং টেবিল। আয়না ফিতে।
ইতি অশথ্বামা।

Friday, May 12, 2017

আশা।।

How often we are. Irrationally optimistic. Without evidence. On a gut feeling. Relying. On an act of good deed. How often. We wait. For a miracle to happen. Because. We believe. Therefore. This. It shall happen. Man. And his folly.

So well captured by the Uzbek poet. Bahrom Ruzimihammad.
সকাল সকাল উঠে সে
একটা মোরগ হত্যা করল।
মৃত মোরগ কবর দিল সে
মাটির অন্দরে।
একদিন তার বাগানে
নাকি মোরগের গাছ হবে।

সে বীজ নিল অঞ্জলি ভরে
রেখে এল দূরে
পাখির বাসায়।
এ আশায় যে একদিন
এ বাসা ছেয়ে যাবে
সবুজ ঘাসে।



দুপুর

How brilliant he captures the beauty of Spring. Poet Bahrom Ruzimihammad. From Uzbekistan.


সে একদিন, কোনোদিন এক
অদ্ভুত দুপুর নেমে আসে
নির্জনতায়।

বাগানের ঘাস ভিজে যায়
নরম বৃষ্টিতে। জানালায়
একটা গঙ্গাফরিং চুপ করে
বসে। যেন ক্লান্ত ঝিমায়।
সবুজ লতা এক শিকে
আলতো জড়ায়।
ভালোবাসায়।

দেয়ালে সারি বেঁধে পিঁপড়ের
দল। ওঠে নামে। সহজ
বিলাসিতায়।
ভাবি, ইস্ যদি দুদন্ড দাঁড়ায়।
কথা বলি। বাক্যে অথবা
ইশারায়।

নিঝুম দুপুর একদিন হঠাৎ
মাতায় ।।

ব্যাঙ।।

এটা একটা ব্যাঙের গল্প।
ব্যাঙ বাদুর দেখেছে
আকাশে।
মুক্তির আশ্বাসে।
অন্ধ, কুৎসিত
তবু উজ্জ্বল
চাঁদনি রাতে।

ব্যাঙ ভেবেছে।
কত সুন্দর আমি।
কত মিঠে বোল।
সবুজ চোখের তারা। আমি
গান জানি। তবু
আমার কপালে ডোবা,
পচা পুকুর, মশা।
আমি দূর্ভাগা।

এইভাবে দিন কাটে। বিষাদে।
তারপর একদিন
ব্যাঙ ভাবে। মাছ সে তো
শুধু জলে। আমি উভচারী।
সাপ। সে তো এঁকেবেঁকে।
আমি লাফাতে পারি।

ব্যাঙ বড় শান্তি পায়। ব্যাঙ
আরামে ঘুমায়।