Tuesday, June 20, 2017

অপেক্ষা।।

আবার পাবলো নেরুদা। কবিতা তো নয়। যেন মদিরা-পেয়ালা। রাত হয়। নিশ্চুপ চারধার। এমন সময়। কবিতায় ডুবে যাওয়া। নেরুদায় ভেসে যাওয়া। বেঁচে থাকার। একটা মানে পাওয়া যায়।

ভোরের ঝড়। ভাসমান মেঘ। প্রলয়ের অনিশ্চয়তা। নিঃশব্দ। নিশ্চুপ। এক অদ্ভুত সময়। পাতা ঝড়ে পড়া। ভেসে ভেসে পড়া। এমন সময়। ভালোবাসার। রাত্রির অপেক্ষার।

অপেক্ষা।।

সকাল সকাল বাদলা-ঝড়
বাইরে তখন সূর্য প্রখর ।

বিদায়ী মেঘ হাওয়ায় ভাসে
রুমালের মত ফিরে ফিরে আসে

ভালোবাসা আজ মেঘের হৃদয়
জনান্তিকে শব্দের ভয়

মধু তাল ওই স্বর্গের সুরে
অসি ঝনঝন বাজে কোন দূরে

হাওয়ায় পাতার নেচে নেচে ফেরা
ঝরা পাতা তবু পাখীর অধরা

ঝড়ের দাপটে ঢেউয়ের মাতনে
তুমি ভেসে যাও কোন আঙ্গনে

চুম্বন যত ভেঙ্গে ভেঙ্গে যায়
আমার মদির পানশালাটায়

দরজায় শুনি কোন করাঘাত
দিন বরষায়, আয় আয় রাত

আয় আয় রাত
আয় আয় রাত .......


দুখী-মন।।

One of the most read and acclaimed poems of Pablo Neruda. The Unhappy One. A sheer brilliance of a poetry.

দুখী-মন।।

দোরগোড়ায় দাড়িয়ে ছিল মেয়ে
আমি যেদিন অনেক দূরে পাড়ি
বোঝেনি সে আর হবে না ফেরা
বলে নি সে স্বভাবজাত ' আড়ি '

আমি যেদিন অনেক দূরে পাড়ি

পথ চলছি মাসের পর মাস
দেখতে দেখতে বছর ঘুরে আসে
পথচলতি বন্ধু হোলো কত
সন্ন্যাসিনী ফোকলা দাঁতে হাসে

দেখতে দেখতে বছর ঘুরে আসে

বর্ষা এল মুছিয়ে দিতে স্মৃতি
নতুন ঘাস আরো সবুজ তর
পাহাড় ভাঙ্গে পাথর নুড়ি হয়
দোরগোড়াতে মেয়ে থরোথরো

নতুন ঘাস আরো সবুজ তর

যুদ্ধ এল যুদ্ধ যেমন আসে
রক্ত ঝরে সবুজ মাঠে লাশ
আগুন জ্বলে খামার পুড়ে ছাই
দোরগোড়াতে মেয়ের মৃদু শ্বাস

দোরগোড়াতে মেয়ের মৃদু শ্বাস

উপত্যকা আগুনে ছারখার
আমার প্রিয় দোলনা জঞ্জাল
মন্দিরের ঘন্টা ভেঙে পড়ে
শহর আজ বীভৎস কঙ্কাল

আমার প্রিয় দোলনা জঞ্জাল

পোড়া শহর মৃত্যু শয্যায়
রক্ত জমাট গাভীর চোখ চেয়ে
সবই হল ধ্বংস পারাবার
অপেক্ষায় একলা সেই মেয়ে

দোরগোড়ায় একলা সেই মেয়ে ।।

The Unhappy One.

I left her in the doorway waiting
And I went away, away
She didn't know I would not come back

A dog passed, a nun passed,
a week, and a year passed.
The rains wash d out my footprints
and the grass grew in the street, and one after another, like stones,
Like gradual stones, the years
came down on her head.
Then to war came
like a volcano of blood.
Children and houses died.
And that woman didn't die.

The whole plain caught fire.
The gentle yellow gods
who for a thousand years
had gone on mediating
were cast from the temple in pieces.
They could not go on dreaming.
The sweet homes, the verandah
where I slept in a hammock,
the rosy plants, the leaves
in the shape of huge hands,
the chimneys, the marimbas,
all were crushed and burned.
And where the city has been
only cinders were left,
twisted iron, grotesque
heads of dead statues
and a black stain of blood.
And that was man waiting.

খঞ্জনি

লোরকা। প্রতিবাদী। বিপ্লবী। কলমে। প্রেমিকাকে চিঠি। শত্রুকে বুলেট। লোরকা। কমরেড। আন্দালুসিয়ায়। সবুজ উপত্যকায়।
কখনো পায়ে হেঁটে। কখনো ঘোড়ায়। মানুষের গান। মুক্ত হাওয়ায়। লোরকা গান গায়। গিটারের তারের। মূর্ছনায়। ফ্র্যাঙ্কোর ফ্যাসিস্ত স্বৈরচার উপেক্ষায়।

আজ। ভারতে নতুন যুগ। আকাশ কমলাচ্ছন্ন। নতুন ভোরের উদয়। শহরে গ্রামে অসীম উদ্দীপনায়। তবু বস্তারে গুলি চলে। তবু কালাহান্ডিতে লাশ কাঁধে। মনিপুরে নতুন সূর্যোদয়। মন্দিরে মন্দিরে খঞ্জনি বেজে যায়।।

খঞ্জনি।

পূব আকাশ রাঙালো ভোরের সূর্যে
দূর থেকে ভেসে আসে খঞ্জনি তান
মৃদু স্বরে বাজুক খঞ্জনি মন্ত্র তালে
পল্লীতে হোক জীবনের জয়গান

কে থামাবে খঞ্জনি ঝংকার ?
বাজুক প্রভাতের মন্ত্র তালে
শেষ কবে বেজেছে খঞ্জনি ?
আকাশে সূর্য কমলা ঢালে

বেজে যায়, বেজে যায় খঞ্জনি
হাওয়ার কান্নায়, নদীর কান্নায়
কে থামাবে এ খঞ্জনি বলো
এ' প্রভাতের অশ্রু মোহনায়

বস্তারে পাখী গান গায়
মনিপুরে শান্তি তামাশায়
গুজরাটে মাটি চাপা কান্নায়
কামদুনি বিচার আশায়

খঞ্জনি বেজে যায়
খঞ্জনি বেজে যায়
কে থামাবি, আয়
খঞ্জনি বেজে যায় ......

ভালোবাসা

ফেলে আসা দিন। আমার। তোমার। তোর। গড়পরতা বাঙ্গালীরা। আমাদের বাংলা। সত্তর- আশির।

রবিবার '৭০-৮০ ।।

সে ছিল মধুকাল, অন্তর্যামী,
আমি মানে কোলকাতা,
কোলকাতা আমি।

রবিবার। ঘুম ভাঙত। সেই লোডশেডিং। বাইরে তখন ছিটে- বৃষ্টি। জানলা-কাঁচে ফরিং।

গন্ধ পেতাম। লুচি আর সাদা চচ্চড়ি। বোন ডাকত। 'ওঠ না দাদা।' আমি 'ধুৎতোরি' ।

ব্যাগ নিয়ে। মাংস দোকান। লম্বা হোত লাইন। ভোলা দা। ' মেটে দিস। চর্বি দিস। এইই, ইসমাইল । '

বাড়ি এসে। ব্যাগ রেখে। আরেক কাপ চা। পাশের বাড়ি। মঞ্জরী। ' সা রে গা মা পা।'

বিছানায় আধ-শোয়া। আগাথা ক্রিস্টি। বাইরে তখন ঝম ঝমাঝম। তুমুল বৃষ্টি।

ঘরে তখন। অখিলবন্ধু কিংবা জগন্ময়। চোখের পাতা ভারী হোতো। নিদ্রা তন্ময়।

ঘুম ভাঙত। আলতো ছোঁয়া। 'আসুন, মহাশয়।' মাংস আর গরম ভাত। সুবাস ঘরময়।

উপচে পরা ভাত। মাংস জামবাটি। থালার পাশে পোস্ত বাটা। সর্ষে তেল খাঁটি।

ভাত খেয়ে। আবার ঘুম। এমন ছিল দিন। সঙ্গী হোতো। নির্মলেন্দু। আব্বাসউদ্দিন।

বিকেল মানে। পাড়ার মোড়। আড্ডা জবরদস্ত। ভোলা দার এক কথা। ' খুশ রহো। মস্ত্' ।

কেউ বলত ' চা, দে রে। ' কেউ বলত 'রাজা , বল না বাপ, আলুর চপ। গরম তেলে ভাজা' ।

রাজা-উজির খতম করে। কাটত সন্ধে বেশ। বাড়ি ফিরতাম। একে একে। আড্ডা শেষের রেশ।

মা বাবা আমি বোন। রাতে চাইনিজ। বোন বলত ' ও দাদাভাই, চিংড়ি-লেজ। প্লিইজ' ।

রাত হোতো। পেরিয়ে যেত। আরেক রবিবার। রাত মানে। কেবল তুমি। বেগম আখতার ।

সে ছিল মধুরাত, অন্তর্যামী,
আমি মানে ভালোবাসা,
ভালোবাসা আমি।।

নয়ণাভিরাম।।

বোঁদলেয়ার। ফরাসী কবি। একটা লেখা পড়লাম। বহু বহু বছর পর। লেখাটা প্রথম যখন পড়েছিলাম। খুব মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তখন একুশ বাইশ। মনও নরম। অল্পেতে নাড়া খেত। মনে আছে। মশারির ভেতর অনেক রাত্রে লেখাটা পড়ে কিছু লিখেছিলাম। হারিয়ে গেছে।
আজ আবার পড়লাম। এখন বয়স হয়েছে। কামদুনি- দিল্লী- পার্কস্ট্রীট অভিজ্ঞ মন। তাই পড়লাম। অন্য একটা অনুভূতি হোলো। রাগ। ক্ষোভ। হতাশার। খুব মন খারাপ হোলো। আগের হারিয়ে যাওয়া লেখাটার জন্যে।

নয়ণাভিরাম।।

তুমি হেমন্তের ঝরা বিকেল, ফিকে আকাশ
ঢেউ তোলো কত উতাল, অসুখী লাভায়
আমার ও ওষ্ঠে নোনা জল, অশ্রু আভাস
মননে তুমি, শুধু তুমি, প্রিয় ভালোবাসায়

তোমার অঙ্গুলি স্পর্শে আমারো শিহরণ
যা খোঁজ তা মলিন খোবলানো অপবিত্র
শৃগালের নখ পাশবিক স্বাক্ষরে চিরন্তন
কি খোঁজ তুমি,প্রিয়, হৃদয় লালায় সিক্ত

এ ধ্বংস আজ পশুর বাসস্থান
নিয়ত ছিঁড়ে খায় নরম শরীর
আহ্লাদে মাতে যত জানোয়ার
শুধু চন্দন বনে সুগন্ধ গভীর

হে সৌন্দর্য, আত্মার সপাট চাবুক,
এই বেলা খুঁজে নাও
ধ্বংস করো যে টুকু অবশিষ্ট
তারপর, প্রিয়, শুধু
আমাকে আমার মত থাকতে দাও ।।

সে রাস্তা।।

অক্টাভিও পাজ। মেক্সিকান কবি। রাজনীতিবিদ।

বহু পুরষ্কার পেয়েছেন। নোবেলও।

আজ পড়লাম। The Street.

---------------------------------////----////

সে রাস্তা।।

সেই তখন থেকে হেঁটে চলেছি, নির্জন
নিরালায়
বড় অন্ধকার গুমোট এ' গলি , হাঁটি
আশংকায়
হোঁচট খাই, উঠি , পড়ি, উঠি , পাথুরে
রাস্তায়
শুকনো পাতা খরখর, মনে হয় পিছনে
ধীর পায়
কেউ হাঁটে, আমার গতির সাথে সাথে
পা মেলায়
আমি জোরে, সেও জোরে, যেন তরঙ্গ
হাওয়ায়
বড় অন্ধকার, এ রাস্তা, আজ মেতেছে
গোলকধাঁধায়
হেঁটে যাই তবু, যদিও ও প্রান্তে কেউ নেই
অপেক্ষায়
আমার সামনেও কেউ নেই, যে ঘুরে বলবে
'কি হে, কোথায়?'